Friday, April 28, 2023

স্কুল নাম্বার :৪ ( আমার স্কুল আমার অহংকার)

 স্কুলের নাম : বাঁশগাড়ি ১ সপ্রাবি

ইউনিয়ন : গজারিয়া
ভৈরব, কিশোরগঞ্জ
"মানুষ কিছুই ভুলে না, ভুলার ভান করে"
এই স্কুলে আসি, প্রিয় সুরমা নদী, বৃষ্টি স্নাত শহর, নীরব রাতের জ্যোৎস্না,পাহাড়ের পাদ ঘেষা সবুজ প্রকৃতি , হাওরে হাওয়ায় দোলানো বুরো ধান খেত, টাংগুয়ার হাওর, পানিতে অবগাহন কৃত হিজল গাছের প্রিয় ফুলের সুবাস, নারায়ণতলা, প্রিয় শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সব স্মৃতিকে পদদলিত করে, কষ্টকে বুকে চাপা দিয়ে। আর নিয়ে আসলাম একরাশ চাকুরির তিক্ত অভিজ্ঞতার ঝুলি । পণ করেছি আর কিছুই করব না আড়াল করে নিব নিজেকে। কেউ যেন আমাকে চিনতেও না পারে, যত সব আমার ইচ্ছে!!!
এটা নাকি বাবার পিতৃ পুরুষের ভিটা ছিল আমরা ত জীবনেও আসিনি, দেখিনি তাই খাপছাড়া লাগছিল।
যাই হোক এবার বলি স্কুলের কথা, বাবা নিয়ে যায় স্কুলে যোগদান করাতে, চিনি না, জানি না, অজানা পথ।
আবার পাড়া গায়ে, সি এন জি, রিক্সা, হাঁটা সবই আছে। স্কুল খুব ছোট পরিসরে, টিনশেড সহ তিনটি ভবন কোন মাঠ নেই। গ্রামের একমাথায় স্কুল, নেই কোন দোকান পাট কিছুই। অফিস রুমে ভালো টেবিল নেই, নেই মনিটরিং বোর্ড, নেই অনার বোর্ডে , বাথরুম সেই নৌকা, ধুলো,বালি দিয়ে একাকার আঙিনা। এইসব চিত্র দেখে কাঁদব না, হাসব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
তারপর থেকে শুরু হল জ্বর আর জ্বর কোনভাবে থামে না, ২৮ দিন একটানা ছুটি আর ছুটি। কত ডাক্তার কিন্তু পরিবেশ এর পরিবর্তন একটা বিরাট ব্যাপার তখন বুঝতে পেরেছি। এখন এই স্কুলই আমার অনেক প্রিয় আর অনেক কাছের মনে হয়। তবে স্কুলের রেজাল্ট বরাবরই ভালো ছিল। সহকর্মীরা অনেক আন্তরিক যার ফলে এই ধারাবাহিকতা ধরে আছি।
আমার সহযোদ্ধারা হলেন ( অমিতা রাণী বিশ্বাস, সাহিদা আক্তার,ইসমাইল হোসেন,দেলোয়ার হোসেন, পাপিয়া আক্তার, আঞ্জুমান ইয়াসমিন, ফারজানা আক্তার, তানিয়া আক্তার, খালেদা বেগম)
শুরু করে দেই আমার কাজ, নিজের হাতে যত কিছু লাগে, সিসি ক্যামেরা, টিভি, ওয়াই ফাই, সাউনড সিস্টেম। শুধু একটা স্মার্ট বোর্ড ছাড়া সব আছে এই স্কুলে। পাখির বাসা করেছি কিচিরমিচির ডাক শুনতে।
লুকিয়ে থাকতে দিল না একটা ফোন। আমাকে সিলেট পিটিআই থেকে ফোন করা হলো আপনি নাকি ভৈরব চলে গেছেন, আমরা ত আপনার নাম ঢাকায় অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। যারা ICT Training ভালো করছে তাদের তালিকা। আমাকে অধিদপ্তর থেকে EBook তৈরির করার কাজে ঢাকা ব্রাক সি ডি এম আসকোনায় দেয়া হল। পরিচয় হল মাসুমা আপা, শর্বানীদত্ত, মাহফুজা,নুরুল হুদা সহ আরো ICT icon দের সাথে। তখন শিক্ষক নিং নামে এই প্লাটফর্ম এ কনটেন্ট আপ্লোড করতাম। কিন্তু মনের পোষা কষ্টে সবই বাদ। যদিও পরে বাতায়নে অটো সদস্য হয়ে যাই। কিন্তু কাজত করি না, করব না। ফেইসবুক চালাই বাঁশগাড়ি নাম দিয়ে, মাসুমা আপার বকা খেয়ে নাম চেইঞ্জ করেছি। কই আর পারলাম লুকিয়ে থাকতে, ক্রিপ্ট লিখার কাজ ধাপে ধাপে চলে ২০১৫ সাল পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভোদন দিয়ে শেষ হয়। অনেক স্মৃতি,যা চ্যানেল আই তে ও দেখানো হয়,সেই ভিডিও ফুটেজ ও আছে।
কাজ করার অনুপ্রেরণা আবার জাগ্রত হলো।
ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কুল Award এর কাজে নেমে পরলাম। আমার স্কুল পেয়ে গেল ব্রিটিশ কাউন্সিল স্কুল এওয়ার্ড ২০১৭ । তারপর Liverpool থেকে দুই জন শিক্ষক Jennifer Adams , Adam Stepinski এসে স্কুল ভিজিট করে থেকে গেল ৫ দিন। আমি যেতে পারিনি বাংলাদেশের শিক্ষকদের যাওয়া বন্ধ ছিল বলে। সারা জাগিয়ে দিলাম এলাকায়। স্কুলে বড় করে প্রজেক্ট ফেয়ার করেছি। যাতে অধিদফতর সহ জেলার, উপজেলার সব উর্দ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। স্কুল ড্রেসসহ সব পরিবর্তন আর পরিবর্তন।
এদিকে শিক্ষক বাতায়নে কাজ করে সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হলাম ২০১৭ সালে। Microsoft এর কাজ শুরু করলাম গাজী সালাউদ্দীন স্যারের হাত ধরে, যা আমাকে "E2 Singapore ২০১৮ " থেকে Algorithm thinking এর Winner হিসাবে সারা বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর Skype Master, MiE fellow, MIE expert, National geography Teacher, Teach SDGs Ambassador হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ গুলো এনে দেয়। আমার আরেক গুরু হলেন কাওসার হাওলাদার স্যার উনার কাছে গিয়ে ভিডিও এডিং শিখেছি। আমি উনাদের কথা লিখে একটু শান্তি পেলাম।
A2i থেকে জাতীয় পর্যায়ের ICT content developer প্রতিযোগিতায় সেরা ১৫ হয়ে Latop পাই। আরও ভালো করার কথা ছিল। কিন্তু আমার সব কিছু একদিনে পরে, ফলে একটাও আশানুরূপ ফল হয় না। যেমন : ওই দিন জাতীয় পর্যায়ের ICT প্রতিযোগিতার উপস্থাপন ও আবার অধিদপ্তরের জন্য IELTS এর Speaking Test একসাথে কোনটা রেখে কোনটাতে যাই, শেষে সবই গুড়েবালি। সেরা নেতৃত্ব নির্বাচিত হই ২০২০ সালে । ২০১৭ সালে কিশোরগঞ্জ জেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই। আবার E2 online ২০২২ এর সাথে project জমা দিয়ে সারা বিশ্বের দরবারে Winner হয়ে যাই। Indian MUGU Foundation থেকে Award পাই ২০১৮ সালে। ছাত্রদের বাইরে নিয়ে গিয়ে পড়াই ২০১৬ সাল থেকে, জুম ব্যবহার শিখি ২০১৭ সালে।
বেলজিয়ামের শিক্ষক Koen Timmers আমাকে Climate Action project কিভাবে PBL ও রিফোজিদের নিয়ে কাজ করতে হয় শিখেয়েছে । যাদের সাথে অনেক কাজ করেছি তারা হলেন, ফিনল্যান্ড এর Pekka Ouli, সুইডেনের Emma Nääs ইন্ডিয়ার Vineeta Garg, Ranjitsinh Disale, Pradeep Negi , Paramjeet Kaur Dhillon, Rashmi Kathuria, মিশরের Soheir Zaki, রাশিয়ার Anna Zubkovskaya ভিয়েতনাম Ha Anh Phurang, জাপানের Mio Horio, শ্রীলংকার Roshan Kumar, রুমানিয়ার Mirela Tanc, Corina Sujdea পর্তুগালের Manuela Correia da Silva , আমেরিকার Tammy Dunbar ইতালির Irene Confalone কানাডার, ব্রাজিল Samantha Oliveira আর্জেন্টিনা Maria Josè Giavedoni হাঙ্গেরি Dondi Gyöngyi Tóthné Bán থাইল্যান্ড Penchan Kongpet নেদারল্যান্ডস Jorne Dijkerman, গ্রিসের Kiki Xynta Foreign Languages নেপালের Sushma Tamang, সাউথ আফ্রিকা Phuti Ragophala পাকিস্তানের Bushra Anis Naqvi,
এদের সাথে আমার সখ্যতা একটু বেশিই বটে। তারা আমাকে দিয়েছে নতুন নতুন স্বপ্নের ধ্যান ধারণা। তাছাড়া আমি চরে বেড়িয়েছি সারা বিশ্বের অনেক স্কুল , জয়েন করেছি Virtual Field Trip. আমার দুটো স্কাইপ গ্রুপ আছে যেখানে প্রায় ১২০০জন শিক্ষক সারা বিশ্বের যুক্ত আছেন।
আমি এক ক্লান্ত পথিক, মাঝে মাঝে উর্ধতন এর ব্যবহার পেয়ে মনে হয় ২৫ হলেই চাকরি চুত্যি ঘটাব। কাজ পাগল আমি, জীবনে এমন রেকর্ড নেই কথা দিয়ে কথা রাখিনি, সময় এর আগে পৌঁছাতে পারিনি। পেয়েছি যত না, হারিয়েছি তার চেয়েও বেশি। হয়তো আর কারো মত সারা বাংলায় শ্রেষ্ঠ নই, কিন্তু দিতে কার্পণ্যতা নেই আমার ।
আমি ভালো লেখকও নই, আবার নিজেকে জাহির করার জন্য ও লিখিনি। মানুষ বেঁচে থাকে তার আন্তরিকতায় ও প্রকৃত কর্মে, লোক দেখানো কর্মে নয়। যদি ইউনিক হওয়া যায় তাহলে আমার এত ভিউ হয়েছে, এত গ্রুপে শেয়ার,তা লাগে না। আমার সাথে সব স্কুলের সহকর্মীরা যুক্ত আছেন, আজ কাজ করে আসছি বলে লিখতে ইতস্ততা করিনি। তাদের মন্তব্য পড়ে মনে হল সত্য চিরকাল জয়ী।
My motto and vision: "Never give up, always think outside of the box, no imitation, just follow and become a life long learner''"..... Opps ! incredible but true...............
এভাবেই দিন বদলের পালায় এখনো যুক্ত আছি।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার : #শিক্ষকবাতায়ন #Microsoftedu #britishcouncilonlineschool
এবং শ্রদ্ধেয় ফারুক আহমেদ স্যার,রফিকুল ইসলাম সুজন স্যার, কবীর হোসেন স্যার, সারোয়ার হোসেন স্যার, অভিজিৎ স্যারসহ, একঝাঁক প্রিয় সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ী।
All reactions:
Rumana Afroze, Ara Esmot and 25 others
21
1
Like

Comment
Share
View more comments
10h 
Shared with Only me
Only me

কেন শিক্ষা?

 শিক্ষার মূল লক্ষ্য: # মানুষকে সৎ হিসেবে গড়ে তোলা,  # মূল্যবোধ জাগানো ও ব্যক্তির গুণাবলির যথার্থ বিকাশ, # বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন  # বৃত্...