Friday, April 28, 2023

স্কুল নাম্বার -৩ (আমার স্কুল আমার অহংকার)

 স্কুলের নাম : মল্লিকপুর মডেল সপ্রাবি,

সদর সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ।
অনেক কষ্টে, কত কাঠ খর পুড়িয়ে হারুন ভাই(শিক্ষক নেতা), ( টি, ই,ও)মোহন মিয়া স্যারের সহায়তা নিয়ে জেলা সদরের মডেলে আসলাম। হারুন ভাই বললেন সকালে মডেল স্কুলে যোগদান করে চাবি দিয়ে আসেন আগের বিদ্যালয়ে। সহকর্মীরা তো অবাক! একটু বললেন না আগে আমাদেরকে?
যাই হোক, এই স্কুল একেবারে সিলেট বাসস্ট্যান্ডে এর সাথেই। কাছাকাছি সব অফিস, জেলা কৃষি অফিস তো একবারে দেয়াল ঘেষা। URC ত ভিতরেই। স্কুলে অনেক কিছুই আছে বাট ভালোবাসা আর একটু যত্ন এর অভাব। আকলিমা ছিল সেই যত্ন করার একজন, আমি তাকে গিয়ে পেয়েছি।
এবার আসি আমার সহকর্মী ছিল কারা (দত্তা চক্রবর্তী, আলপনা পুরকায়স্থ,সুফিয়া বেগম, নাজমা বেগম ১, নাজমা বেগম ২ , সুতপা ভট্টাচার্য, ফেরদৌস আরা ইয়াসমিন , সম্পা তালুকদার, রোখসানা ইয়াসমিন, শিরিন আক্তার)।
স্কুলে ভবন সংখ্যা ৪ কাজেই সাজানো কোন ব্যাপার না, বিরাট হল রুম যা অন্য কোন স্কুলে ছিল না। বাথরুম ও পর্যাপ্ত, লাইব্রেরি আছে বটে সব করুন।
যেদিন যোগদান করি লেগে গেলাম সব পরিচ্ছন্ন করার কাজে। বাড়ি গিয়ে পরদিন এসে দেখি স্কুলে চুরি হয়ে গেছে, খাতা পত্র সব লন্ডভন্ড। কি আর করা থানায় জি ডি। পুলিশ দেখেই ভয় পাই তারপর আমি কি না এই বিপদে! সহকারী শিক্ষকদের টেবিল ছিল না ভালো এই গুলো বানালাম, মনিটরিং বোর্ড,অনার বোর্ড । লাইব্রেরি রুমে যাওয়ার উপায় নেই, যে শিক্ষক লাইব্রেরি নিয়ে ট্রেনিং পেয়েছেন ডেপুটেশন এ পিটিআই এর এক্সপেরিমেন্টাল স্কুলে। কাকে কি বলব সোকেচের ভিতরে বইয়ের সাথে চিকার বিট? দুতলায় ট্রান্সপার করলাম লাইব্রেরি, শিশু শ্রেণি। তখন শিশু শ্রেণির জন্য ছিল সিসিমপুর এর কার্যক্রম যা শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে পরিচালিত হত। মনে পড়ে আমি ক্লাস নিতে চাইলে আপার সহকর্মীগণ বলতেন আপা আপনি ক্লাস নিবেন না, আপনাকে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে হয়। মহিমা নামে একজন ছাত্রী ছিল সে এখনো ফোন করে, মনে হয় SUST এ পড়ে। তবে এই স্কুলের ছাত্ররা ছিল নাচে, গানে খুব পারদর্শী।
স্কুলের মাঠ অনেক নিচু ছিল, পানি লেগে থাকত, প্রায় ৯ হাজার ফুট বালি ভরাট করাই ফ্রিতে, একজন এল জি ডির ইঞ্জিনিয়ার এর মাধ্যমে। স্কুলের জায়গা হল ৯৬ শতক, এত বড় স্কুল! আমার চোখে সেরা, সুন্দর ও খুব প্রিয় ।
নিচ তলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আলামিনের সুবাদে আর মোহন স্যারের এর সহায়তায় পেলাম কম্পিউটার ল্যাব, প্রিন্টার, টি ভি,খেলনাসহ অনেক কিছু। লাল গালিচার কার্পেট ও ছিল একটা বেসরকারি এন জিও থেকে পাওয়া । রুমে গেলে মন ভরে যেত। শাহলান স্যার ছিলেন URC ইন্সট্রাকটর। স্যার আমাকে অনেক পছন্দ করতেন।
ডি পি ও ছিলেন নার্গিস সাজেদা সুলতানা ম্যাডাম, পরবর্তীতে কুমিল্লা বদলি হয়ে গিয়েছিলেন। উনার সাথে অনেক স্মৃতি, ম্যাডাম কে নিয়ে প্রায়ই যে কোন ট্রেনিং আর কাজে সিলেট যেতাম, আমি ছিলাম ম্যাডামের প্রিয়ভাজন। তখন তিনি পিটিআই এ সুপারের দায়িত্বও পালন করেছেন। পরে অবশ্য অধিদপ্তরে চলে যান।
স্কুল সাজানো হল মনের মত করে, ট্রেনিজরা এসেও অনেক খুশি । তারা বলে আমরা পিটিআই প্রেক্টিস ট্রেনিং করতে গেলে অন্য স্কুলে বসতে দেয় না, আর আপনি আমাদের কত যত্ন নেন। তখন দু শিপ্ট এর প্রাক্টিস টিচিং চলত। URC তে বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিং এ আসলে ও অনেক শিক্ষক খেত আমাদের শিশু শ্রেনীর কক্ষে। বাথরুমের বাতিক আমার আগে থেকেই আলাদা জুতা পরতে হত সবাইকেই।
ব্রেইল ট্রেনিং করে ঢাকা সি ডি টি থেকে আলামিনকে পড়াই। শুরু হল প্রথম ICT ট্রেনিং সব মডেলে। দূর্গা পুজোর ছুটি, কেউ যাবে না ICT ট্রেনিং এ, কি আর করা আমিই গেলাম প্রথম ব্যাচে সিলেট পিটিআই। লেপ্টপ, মাল্টিমিডিয়া ও পেলাম। ট্রেনিং ও অনেক ভালো করেছি কারণ ঘরে আগেই লেপ্টপ ছিল।
English in Action এর ট্রেনিং করি সিলেট সুপ্রিম হোটেলে থেকে। রেহনোমা কুমকুম ম্যাডাম এর একটা ক্লাস আজ ও আমার মনে ধরে আছে কি যে ফেন্টাস্টিক কি বলব। বদলি জনিত কারণে নতুন উপজেলায় আর EIA পাইনি।
স্কুলের বেশির ভাগ ছাত্র ছিল পুলিশ লাইন আর বিডিয়ারদের বাচ্চা। একেবারে একদল আসত আবার চলে যেত। স্থানীয় ছাত্র খুব কম ছিল। ২৬ শে মার্চ ও ১৬ ই ডিসেম্বর এর কুচকাওয়াজের জন্য থানায় যেতে হত মিটিং করার জন্য। যেখানে পুলিশ ফোবিয়া আমার। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য ADC শিক্ষার মিটিং,সমাপনী পরিক্ষার সেন্টার, আর কত নিয়োগ পরিক্ষার সেন্টার,র্যালি, অনেক অনেক বাড়তি কাজ??? কারণ মডেলের প্রধান শিক্ষক অনেক কমিটির সদস্য, কিন্তু আমি হলাম স্কুল পাসনেট আর এখন হল উল্টো।
হঠাৎ শ্রেষ্ঠ শিক্ষক প্রতিযোগিতার জন্য এর ডাক পেলাম উপজেলা থেকে, তখন জোর করে দেয়া হত, কেউ জানত না যে পরবর্তীতে বিদেশ নেয়া হবে। আমি জেলা আর বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত গিয়েছিলাম। ভাইবা বোর্ড থেকে বলা হলো মাত্র এইকদিন চাকুরী আরো সময় আছে? যাক জাতীয় পর্যায়ে এসে বিদায়। কিন্তু বিভাগের শ্রেষ্ঠ হয়ে প্রধান শিক্ষকদের জন্য লিডারশীপ ম্যানুয়েল তৈরির কাজে অধিদপ্তরে কয়েকবার গিয়েছিলাম। তখন প্রিয় দেলোয়ার হোসেন স্যার (পরিচালক প্রশাসন )এর সাথে পরিচয় ও একসাথে গ্রুপে কাজ করি।
এই স্কুলের সুবাদে থাইল্যান্ড সফর করি!
এত গেলো প্রাপ্তির গল্প এবার তিরস্কারের গল্প শুনুন।
আমার ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর সুজাতা রানী মিথ্যা কথা বলে, বারবার অনুরোধ করে থ্রি পাসের সার্টিফিকেট নিয়ে নেয় তার মেয়ের জন্য। যা ছিল আমার জীবনের চরম ভুল। সুজাতা মেয়রের কাছে দেখাল আমি মডেল স্কুল থেকে সার্টিফিকেট আনছি। মেয়র কে সব কাউন্সিলর অনাস্থা দিতে চাচ্ছিল তখন, যার প্রতিশোধ নিতে আমাকে ধরে। ডি পিও স্যার নুরুল ইসলাম তদন্ত করিয়ে আমাকে মিথ্যা কথা বলতে বলেন, আমি সই দেইনি জাল সই করেছে, কিন্তু আমি বলিনি। সংবাদ সম্মেলনসহ আরও কত কি হয়?
এদিকে ডি পিও সার ২ টা ইনক্রিমেন্ট চিরদিনের জন্য কেটে দেন। আবার ডি পিও স্যারই একজন এ টিও স্যারকে ডেকে বলেন, রায়হানাকে বলেন ঢাকা থেকে ফোন করাতে। আমি দেলোয়ার স্যার এর সাথে কথা বলি ও স্যার অনেক সহায়তা করেন। ডি পিও স্যার আগের কাগজ ছিড়ে আরেক অর্ডার করেন যে, একবছর একটা ইনক্রিমেন্ট হেল্ডাপ রাখেন। এদিকে হাসান মোহাম্মদ জুনায়েদ স্যার দ্রুত সার্ভিস বুকে এন্ট্রি করে ফেলেন,মনে হচ্ছিল টি ই ও স্যার গুরু দায়িত্ব সেরে ফেলেছেন।
কয়েকজন হেডটিচার পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছে মেয়রের সাথে,যাদেরকে আমি মনে রেখেছি?? বিপদে এই জাতীয় শিক্ষকরা তামাসা দেখে ও ক্ষতি করে। কি আর করা ভাবলাম এখানকার মায়া ছাড়তে হবে, দরখাস্ত দিয়ে চুপিসারে সুনামগঞ্জ থেকে বিদায় নিলাম এক সপ্তাহের মধ্যে।
আহমদ নুর কাউন্সিলর ভাই, এখন মল্লিকপুর কেমন আছে আপনারাই মূল্যায়ন করবেন। চার্য হেন্ড অভার করেছি জায়গা নেই লিখার কত শত জিনিস আলপনা পুরকায়স্থ (টুকু) দিদির কাছে? উল্লেখ যে টুকু দিদি সার্টিফিকেট না দিতে বারবার নিষেধ করেছেন আমাকে। আমি ভেবেছি থ্রি পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে কি করবে স্কুলে ভর্তি ছাড়া???
এই আমার বদলে যাওয়ার আর বদলে দেয়ার গল্প। ( ৪ নাম্বার নিয়ে আসছি)
All reactions:
You, Rumana Afroze, Shamsun Nahar and 48 others
36
1
Like
Comment
Share
View more comments

Alpana Purkaystha
আপা,ইশ্বর আপনাকে অনেক মেধা দিয়েছেন।আপনাকে কেউ দমিয়ে রাখতে পেরেছে কি?যে বা যারা আপনার পিছনে লেগেছিল তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে।আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে সার্টিফিকেটা নিয়েছে।যারা এর পিছনে ছিল

No comments:

কেন শিক্ষা?

 শিক্ষার মূল লক্ষ্য: # মানুষকে সৎ হিসেবে গড়ে তোলা,  # মূল্যবোধ জাগানো ও ব্যক্তির গুণাবলির যথার্থ বিকাশ, # বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন  # বৃত্...