কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর নিনজা টেকনিক।
আমরা সবাই চাই, কেউ আমাদের শুনুক, বুঝুক। কিন্তু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে মনে হয় যেন মনের মধ্যে এক বিচারসভা বসে গেছে। “ভুল করলে কি হবে?” “মানুষ হাসবে না তো?” এই ধরনের ভয়ের কণ্ঠগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে। কিন্তু আসল নিনজা হয় সেই ব্যক্তি, যে ভয়কে শ'ত্রু না বানিয়ে সাথী বানিয়ে ফেলে। ক্যামেরার সামনে কথা বলার দক্ষতা আসলে একধরনের ‘মাইন্ড ট্রেনিং’। নিচে ৭টি সাইকোলজিক্যাল নিনজা কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো, যা চুপিচুপি আপনার আত্মবিশ্বাসে আ'গুন ধরিয়ে দেবে।
১। নিজের ভাষা ও কণ্ঠের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো।
কমিউনিকেশনের প্রথম ধাপ হলো স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয়ভাবে কথা বলা। ক্যামেরার সামনে কথা বলার সময় আপনার কণ্ঠের স্বর, গতি এবং শব্দচয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে শুরু করবেন?
মিরর প্র্যাকটিস করুন, প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস করুন। যেকোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলুন, যেমন আপনার দিন কেমন কাটলো। এটা আপনার মুখের ভাবভঙ্গি এবং কণ্ঠের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করবে।
২। ভয়কে বন্ধু বানান তাকে লুকাবেন না।
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, “আমি ভয় পাচ্ছি কেন?” ধরুন, আপনি ক্যামেরার সামনে গিয়ে ঘামছেন কারণ ভেতরে ভয় “সবাই আমায় জাজ করবে!” ঠিক এই মুহূর্তেই ভয়কে চিনুন আর বলুন, “ভয়, আমি জানি তুমি এসেছো, কারণ এটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।” মনে রাখবেন, স্টিভ জবসও প্রতি প্রেসেন্টেশনের আগে নার্ভাস হতেন, কিন্তু তিনি ভয়কে স্বীকার করে নিয়েছিলেন আর এটাই তাঁকে মানুষের কাছে মানবিক করে তুলেছে।
৩। শ্বাসের মাধ্যমে মস্তিষ্ক হ্যাক করুন।
দ্রুত শ্বাস আমাদের ব্রেনকে সংকেত দেয় সামনে “বিপদ!” তাই ক্যামেরার সামনে আসার আগে চোখ বন্ধ করে ৪ সেকেন্ড ইনহেল, ৪ সেকেন্ড হোল্ড, ৪ সেকেন্ড এক্সহেল করুন। উদাহরণস্বরুপ TED Talk বক্তাদের মধ্যে অনেকেই এই “Box Breathing” ব্যবহার করে স্টেজে ওঠার আগে।
৪। আপনি যদি ক্যামেরার সামনে কী বলবেন তা না জানেন, তাহলে নার্ভাস হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই কথা বলার আগে পরিকল্পনা করা জরুরি।
স্ক্রিপ্ট তৈরি করুন, একটা সংক্ষিপ্ত স্ক্রিপ্ট লিখুন। যেমন, আপনি যদি একটা ট্রাভেল ভ্লগ বানাতে চান, তাহলে কোন জায়গার কী কী বিষয় তুলে ধরবেন তা আগে ঠিক করুন। বু'লেট পয়েন্ট, পুরো স্ক্রিপ্ট মুখস্থ না করে মূল পয়েন্টগুলো লিখে রাখুন। এটা আপনাকে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে সাহায্য করবে। রিহার্সাল, ক্যামেরা চালু করার আগে একবার রিহার্সাল দিন।
৫। শারীরিক ভাষা (Body Language) উন্নত করা। ক্যামেরার সামনে কথা বলার সময় আপনার শারীরিক ভাষা দর্শকদের উপর বড় প্রভাব ফেলে। আপনার হাতের অঙ্গভঙ্গি, মুখের হাসি এবং চোখের যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যামেরার লেন্সকে দর্শকের চোখ ভেবে সরাসরি তাকান। এটা আপনার কথাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। হাতের অঙ্গভঙ্গি, অতিরিক্ত হাত নাড়ানো এড়িয়ে চলুন। উদাহরণস্বরূপ, কোনো পয়েন্ট বোঝাতে হলে হাত দিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে ইঙ্গিত করুন, যেমন একটা প্রোডাক্টের ফিচার দেখানোর সময়। ভঙ্গি, সোজা হয়ে দাঁড়ান বা বসুন। এতে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী দেখাবে।
৬। পজিটিভ ম্যাজিক মন্ত্র।
ভিডিও শুরু করার আগে বলুন “আমি পারি”, “আমি উপকার করতে এসেছি”, “আমার কণ্ঠ মানুষের কাজ দেবে” এই ধরণের বাক্যগুলো ব্রেনকে নতুন ন্যারেটিভ শেখায়। একজন নার্স প্রতিদিন এই বাক্য লিখতেন “আমি আলো ছড়াতে এসেছি” এটাই তার ভয়কে সাহসের রূপ দিত।
৭। রেকর্ডিং, নিজের কথা রেকর্ড করুন এবং শুনুন। লক্ষ্য করুন কোথায় আপনি দ্রুত কথা বলছেন বা কোথায় শব্দগুলো অস্পষ্ট হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি একটা প্রোডাক্ট রিভিউ ভিডিও বানাচ্ছেন। রেকর্ড করার পর দেখুন আপনার বর্ণনা কতটা স্পষ্ট এবং আকর্ষণীয় ছিল।
নিনজা হওয়া মানে পারফেক্ট হওয়া নয়, বরং ভয়কে দেখে যাওয়ার সাহস রাখা। ক্যামেরার সামনে ভয় পাওয়া মানে আপনি গুরুত্ব দিচ্ছেন, আপনি ভালো করতে চান। এই চেষ্টাটুকুই আপনাকে একদিন অন্যদের জন্য মডেল বানিয়ে তুলবে। তাই আজ থেকে আপনি আর একা নন আপনার ভয়, আপনার সাহস, আর এই নিনজা টেকনিক সব একসাথে চলবে। শুরু করুন, শান্তভাবে, সাহস নিয়ে।
#NinjaTechnique